অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আনুষ্ঠানিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ইসরাইলের সম্প্রসারণকামী ষড়যন্ত্রগুলো বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন সরকারের অপতৎপরতাও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইলি সম্প্রসারণকামী ও দখলদারিত্বের ষড়যন্ত্রগুলোর প্রতি ট্রাম্পের উপদেষ্টা-মহল ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সহায়তা ও সমর্থনের বিষয়টি ছিল ট্রাম্পের আসন্ন নতুন প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাদের ঘোষিত ও আলোচিত এ ধরনেরই একটি বিষয় ছিল গোটা পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অংশ বলে ঘোষণা দেয়ার ইসরাইলি প্রচেষ্টার প্রতি ট্রাম্প সরকারের সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি। রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর টম কটন পশ্চিম তীর নামের পরিবর্তে সব ধরনের সরকারি তৎপরতা ও নথি-পত্রে এর কথিত প্রাচীন ইহুদি নাম ‘ইহুদা ও সামেরাহ’ ব্যবহারের দাবি তুলেছেন।
এর আগে ইসরাইলে নিযুক্ত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হক’বি গোটা পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যাপারে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে ট্রাম্প-সরকার সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন।
ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ‘শতাব্দীর লেনদেন’ (বা দ্য ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি) শীর্ষক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ত্রিশ শতাংশ অঞ্চলকে ১৯৪৮ সালে দখল-করা ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। এখন ট্রাম্পের কোনো কোনো উপদেষ্টা ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছেন।
আসলে ইসরাইলি লবি এখন অতীতের চেয়েও ট্রাম্পের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ের জন্য বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। পশ্চিম-তীরের আরও বেশি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করা এই লবির অন্যতম প্রধান দাবি। অথচ এই অন্যায় আবদার ফিলিস্তিনি জাতি ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মহলের কাছে একেইবারেই অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থী।
বর্ণবাদী ইসরাইল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সরকারের সর্বাত্মক সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে পশ্চিম তীর ও আল-কুদস্ অঞ্চলে অবৈধ ইহুদি উপশহর গড়ার কাজ নজিরবিহীনভাবে জোরদার করেছে। নেতানিয়াহুর ইসরাইলি মন্ত্রীসভার উগ্র ডানপন্থী সদস্যরা ২০২৩ সালে পশ্চিম-তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের অংশ করার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রকাশ্যেই খুব জোরালোভাবে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। গাজার যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনিদের বর্তমান অবস্থা বা পরিস্থিতির আলোকে এবং একই সঙ্গে ট্রাম্প আবারও মার্কিন ক্ষমতার অধিকারী হতে চলেছেন বলে এই কুচক্রী মহল এই সময়টাকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্বের পরিধি বাড়ানোর সূবর্ণ সুযোগ বলে মনে করছে।
ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী স্মোদরিচও এ ব্যাপারে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন পশ্চিম-তীরের নগর প্রশাসন বাতিল করার খুব বড় সুযোগ এসেছে। গাজাও এই প্রশাসনের আওতাধীন। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে তিনি এ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ ব্যাপারে কার্যকর প্রক্রিয়া সৃষ্টির চেষ্টা তারা করবেন।
স্মোদরিচ পশ্চিম-তীরের দুই কোটি ৭০ লক্ষ বর্গমিটার অঞ্চল দখলের ইসরাইলি পদক্ষেপের খবর দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি হওয়ার পর ফিলিস্তিনি জমি বা ভূখণ্ড গ্রাসের এটাই সবচেয়ে বড় ইসরাইলি পদক্ষেপ।
এদিকে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী জনপ্রিয় দল হামাস বলেছে, পশ্চিম-তীরের শহর ও গ্রামগুলোতে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন ও আগ্রাসনের ইসরাইলি নীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। ফিলিস্তিনি জনগণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে কথিত ইসরাইল তথা ৪৮ সালে দখল করা ফিলিস্তিনের সীমানার বাইরে জবরদখলের পরিধিকে আরও বিস্তারের অপচেষ্টা বানচাল করবে।
তাই এটা স্পষ্ট মার্কিন ক্ষমতার মসনদে ট্রাম্প পুন-নির্বাচিত হওয়ায় ইহুদিবাদীরা ভূমি-আগ্রাসনের ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী হয়ে উঠলেও গোটা ফিলিস্তিনের আসল মালিক ফিলিস্তিনি জাতি কখনও এইসব ষড়যন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করবে না। হামাস যেমনটি বলেছে, পশ্চিম তীর হচ্ছে বিপ্লব ও ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি যতক্ষণ না ইসরাইলি দখলদারিত্ব গোটা ফিলিস্তিন থেকে নির্মূল হচ্ছে।
Leave a Reply